মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০২০

রাগি মেয়ের ভালােবাসা • পার্ট - ০২ | রাগি মেয়ের প্রেমে পর্বঃ ০২

গল্পঃ রাগি মেয়ের প্রেমে
লেখকঃ শরিফুল ইসলাম জুনিয়র
পর্বঃ ০২
(১ম পর্বের পর থেকে)

হঠ্যাৎ করেই দেখলাম সেই ফালতু মেয়েটা আমার দিকে আসছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে, আমার কাছে এসে পাশ কেটে চলে গেলো, অন্য একটা টেবিলে গিয়ে বসলো। আরো কতো গুলো গুণ্ডি মেয়ে ওর পাশে গিয়ে বসলো। 

কিছুক্ষণ ওরা নিজেরা নিজেরা কথা বলতে লাগলো, তারপর পুরো দল আমাদের কাছে আসলো....

তন্নিঃ ওই কান ধর,,(আমাকে)

সানিঃ কান ধরবে মানে? কি করছে ও? 

তন্নিঃ ও আমার ফ্রেন্ড ফাহিমাকে চোখ মেরেছে। 

আমিতো পুরা টাসকি খেয়ে গেলাম, তারপর বললাম....

আমিঃ আপনার সমস্যা কি? শুরু থেকেই আমার পিছে লাগছেন। 

তন্নিঃ কিহ! আমি তোর পিছে লাগছি? তোর মতো ছোটলোকের পিছে আমি লাগবো? 

আয়মানঃ এই তন্নি তোর সমস্যা কি? ও আজকেই এই কলেজে আসলো, আর তুই আজকেই ওর পিছে লাগছিস? সমস্যা কি তোর,,,,

তন্নিঃ তোর এতো জ্বলে কেন? ও তোর কি হয়? 

সাদিয়াঃ দেখ তন্নি, ও আমাদের ফ্রেন্ড, শুধু ফ্রেন্ড না, বলতে পারিস বেস্টফ্রেন্ড। 

তন্নিঃ বাহ! প্রথম দিনই বেস্টফ্রেন্ড? আর দুই দিন গেলে তো জামাই বানাই ফেলবি।

সাদিয়াঃ হে বানাবো, তোর কোনো সমস্যা? যা এখান থেকে।

তন্নিঃ ওই চল সবাই (সাথে থাকা মেয়ে গুলোকে) এই ছোট লোকের বাচ্চাকে পরে মঝা বোঝাবো। 

সবাই চলে গেলো, রাগে মাথায় রক্ত উঠে গেলো। শালা বার বার ইচ্ছা করছে আগের রূপে ১ ঘন্টার জন্য ফিরে যাই। আর দেখিয়ে দিই আমি জিনিষ, ছোট নাকি অন্য কিছু দেখিয়ে দিই। আমার চুপ থাকা দেখে সাদিয়া বললো...

সাদিয়াঃ কিরে তোর সাথে তন্নির আগে কিছু হয়েছে? 

আমিঃ হুম, (পুরো ঘটনা বললাম)

আয়মানঃ আচ্ছা বাদ দে, মেয়েটা ফালতু। বাবার ক্ষমতা দেখিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে। ওর থেকে দূরে থাকিস। 

সানিঃ ওই এগুলো বাদ দে এখন, খেয়ে নে সবাই। 

তারপর খাওয়াদাওয়া করে বাসায় চলে গেলাম, প্রথমদিক ভালোই কাটছে, যদি তন্নি মেয়েটার সাথে এগুলো না ঘটতো তাহলে আরো ভালো হতো। 

রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি, অচেনা একটা ছেলের সাথে তন্নি এমন কেন করলো? তবে তন্নি মেয়েটা কিন্তু অনেক সুন্দর, প্রথম দেখায় যে কেউ প্রেম পড়বে। রাগ টা একটু বেশি মনে হয়। এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। 

সকালে ঘুম থেকে উঠে টিউশনি করিয়ে কলেজে চলে গেলাম। গেইট পার হয়ে একটু ভিতরে গেলাম। গাছ তলায় তন্নির অনেক গুলো গুণ্ডি ফ্রেন্ডস বসে বসে একটা ছেলেকে র‍্যাগ দিচ্ছে। ছেলেটা কান ধরে এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আমি দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে যাচ্ছি। এমন সময় একটা মেয়েকে আমাকে ডাক দিলো...

মেয়েঃ ওই চিকনা,,,, 

আমিঃ......

মেয়েঃ ওই তোকে বলছি (আমাকে দেখিয়ে)। এদিকে আয়,,, 

আমিঃ কি হইছে? কি সমস্যা ডাকছেন কেন? 

মেয়েঃ সিনিয়রদের কিভাবে সম্মান দিতে হয় সেটাও জানিস না?

আমিঃ মানে! সিনিয়র কে? 

মেয়েঃ কে আবার আমরা কি সিনিয়র না? 

আমিঃ ওই হ্যালো, আমরা সেম ব্যাচের ওকে? 

মেয়েঃ তোর তো সাহস কম না! মুখে মুখে তর্ক করিস। 

আমিঃ সাহসের কি দেখছেন এখনো? 

মেয়েঃ কিছু বললি? 

আমিঃ না, আমি যাই কাজ আছে। 

মেয়েঃ ওই দাঁড়া! 

আমিঃ কেন? 

মেয়েঃ তুই কান ধরে পাঁচ বার উঠবস করবি? 

আমিঃ মানে! 

মেয়েঃ মানে তুই কান ধরে উঠবস করবি। 

আমিঃ যদি না করি? 

মেয়েঃ মেরে তোর মাংস আলাদা করে ফেলবো,, তুই আমাদের সম্পর্কে ভালো করেই জানিস। 

আমিঃ দেখবো কি করো! 

আর কিছু না বলে ক্লাসে চলে গেলাম, দেখলাম ওরা কাকে যেন কল দিয়ে আসতে বলতেছে। আমি ওদিকে খেয়লা না করে ক্লাস রুমে চলে গেলাম। 

৩য় ঘন্টার সময় আমি সানি, সাদিয়া, ফারিয়া আর আয়মান বসে বসে গল্প করতেছি। এমন সময় ৪-৫ টা ছেলে স্টিলের পাইপ নিয়ে ক্লাসে ঢুকলো। দেখে মনে হচ্ছে না এই কলেজের ছেলে। স্টুডেন্টরা সবাই ভয়ে জড়ো হয়ে বসে আছে। ওদের মধ্যে একটা ছেলে বললো...

"ওই তোদের মধ্যে জুয়েল কে রে?"" 

সবাই আমার দিকে তাকালো, ছেলেটা আমার কাছে এসে... 

ছেলেঃ ওই তুই জুয়েল? 

আমিঃ হুম আমি। 

ছেলেটা আর কোনো কথা না বলে আমার কলার চেপে ধরে টান দিয়ে বসা থেকে উঠিয়ে টানতে টানতে নিচে নিয়ে যায়। ক্লাস সহ পুরো ক্যাম্পাসের সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। 

নিচে গাছ তলায় নিয়ে যায়, দেখলাম তন্নি আর ওর গুণ্ডি মেয়ে গুলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা ছেলের সাথে কথা বলতেছে। তারমানে ওরাই আমাকে মারার জন্য ছেলে ফিট করেছে। আমাকে যে ছেলেটা নিয়ে যায় সে বললো... 

""" ভাই ওরে নিয়ে আসছি, """ ছেলেটা আমার দিকে তাকালো, আর সাথে সাথে বললো...

ছেলেঃ আরে জুয়েল ভাই! আপনি এখানে? 

আমিঃ ফাহাদ, তুই এখানে কেন? 

আমাদের কথা শুনে তন্নিসহ বাকি সবাই হা করে তাকিয়ে আছে, আসলে ফাহাদ ছেলেটা আমার সাথেই রাজনীতি করতো, একবার একটা মামলাও খায় আর আমিই তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করি। সেই থেকে আমাকে দেখলে সর্বোচ্চ সম্মান দেখায়। 

ফাহাদঃ ভাই এই মেয়েটা (তন্নি) আমাকে টাকা দিয়েছে একজনকে মারার জন্য কিন্তু সেই ছেলেটা যে আপনি সেটা আমাকে বলেনি। প্লিজ ভাই কিছু মনে করবেন না, নেক্সট টাইম আর হবে না। প্লিজ ভাই মাফ করে দেন। 

আমিঃ আচ্ছা বাদ দে, আমি কিছু মনে করিনি। 

ফাহাদঃ ভাই আপনি এখানে কেন? ওদিকের কি খবর? 

আমিঃ ওগুলো সব বাদ দিয়ে দিছি। আচ্ছা এসব ব্যাপারে এখানে না বললেই ভালো হয়। 

ফাহাদঃ ওকে ভাই, আমি চলে যাচ্ছি। আর ওর (যে কলার চেপেছে) ব্যবহারে কিছু মনে করবেন না। 

আমিঃ ওকে যা, কিছু মনে করিনি। 

ফাহাদঃ আর এই যে আপনি (তন্নি), নেক্সট টাইম আর আমাকে ডাকবেন না। যতসব ফাজিল মেয়ে। আচ্ছা ভাই যাচ্ছি। 

পুরো ক্যাম্পাসের স্টুডেন্টরা আমার দিকে অভাক ভাবে তাকিয়ে রইলো। সানি, আয়মান, ফারিয়া, সাদিয়া ওরাও ছিলো। 

আমি ক্লাসে চলে গেলাম, কিছুই ভালো লাগছে না। মেয়েটা এমন কেন করলো আমার সাথে? ধুর ক্লাস করবো না। সোজা ক্যান্টিনে চলে গেলাম। দেখলাম ওখানে সানিরা সবাই আছে। আমি গিয়ে ওদের পাশে বসলাম। সবাই ভুত দেখার মতো হা হয়ে আছে,,,, 

আমিঃ কিরে তোরা এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? 

সাদিয়াঃ একটা সত্যি কথা বলবি? 

আমিঃ হুম, কি কথা? 

সাদিয়াঃ তুই কে? 

আমিঃ মানে! আমি জুয়েল। তোদের ফ্রেন্ড।

আয়মানঃ সেটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু ছেলে গুলো তোকে দেখে এমন ভয় পেলো কেন? 

আমিঃ আরে ওরে আমি আগে থেকেই ছিনি, তাই। 

সানিঃ তুই মিথ্যা বলতেছিস। আমাদের বল, কোনো সমস্যা নাই, আমরা তোর ফ্রেন্ড কাওকে কিছু বলবো না। 

আমিঃ আরে ধুর কি বলবো? 

আয়মানঃ ছেলে গুলো তোকে দেখে এমন করলো কেন? 

সাদিয়াঃ শুধু আমরা না, তন্নি সহ পুরো ক্যাম্পাসের সবাই অবাক হয়ে গেছে। এর কারণ কি? 

আমিঃ আরে ধুর আমি নিজেই জানি না। 

সানিঃ তারমানে তুই সত্যিটা বলবি না এইতো? এই সবাই চল, এখানে থেকে আর লাভ নাই। 

আমিঃ এই কই যাস, বস এখানে। বলছি,,,

ফারিয়াঃ হুম বল তাহলে,,,, 

আমিঃ.......... (পুরো ঘটনাটা ওদের কে বললাম)

সাদিয়াঃ এই জন্যই ছেলে গুলো তোকে ভয় পেলো? 

আমিঃ হুম,,,

সানিঃ তুই কি তন্নির সাথে আবার কোনো ঝামেলা করবি? 

আমিঃ আরে না, ঝামেলা করলে প্রথমেই করতে পারতাম, কিন্তু আমি করবো না। এগুলো করার ইচ্ছা থাকলে আগের ক্যাম্পাসেই করতাম, এখানে আসতাম না। 

সাদিয়াঃ কিন্তু ও যদি তোর সাথে আবার কোনো ঝামেলা করে? 

আমিঃ করলে করুক, বাট আমি কিছু করবো না। 

সানিঃ ঝামেলা কেন করবে, আমরা কি মরে গেছি নাকি? আমরা থাকতে তন্নি আর কোনো ঝামেলা করতে পারবে না। 

আয়মানঃ হুম ঠিক বলছিস। বন্ধু যা হইছে বাদ দে। আমরা আছি, তুই টেনশন করিস না। 

সেদিন ওদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। রাতে বসে বসে ভাবতেছি আমার জন্ম হলো কি শুধু ঝামেলায় পড়ার জন্য? যাও সব কিছু ছেড়ে একটু ভালো হতে চেয়েছি সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।

তারপর খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আবার কলেজে গেলাম। ক্লাসে গিয়ে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় তন্নি মেয়েটা আসলো, ছেলেদের মতো শার্ট প্যান্ট পড়ে, এসে আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আমি ওর দিকে না তাকিয়ে আবার আড্ডা দিতে শুরু করলাম। 

ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছি এমন তন্নির গুণ্ডি ফ্রেন্ড গুলো এসে আমাকে ঘিরে ধরলো,,,,, 

রিয়াঃ কিরে হিরো, কই যাস? 

আমিঃ দেখেন আপনাদের সাথে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। সো আপনারা আপনাদের মতো থাকেন আর আমাকে আমার মতো থাকতে দেন। 

পলিঃ আরে তোর মতো ছোটলোক আমাদের সাথে কি কথা বলবে! তোর কোনো যোগ্যতা আছে আমাদের সাথে কথা বলার? 

মাথায় রক্ত উঠে গেলো, নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে আর কোনো কথা না বলে সোজা হাটা দিলাম। এমম সময় তন্নি অন্য পাশ হতে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।  

তন্নিঃ কিরে ছোটলোক কই যাস? দাঁড়া এখানে,,, 

আমিঃ আপনার সমস্যা কি? 

তন্নিঃ আমার সমস্যা তুই, তোকে দেখলেই আমার গা জ্বলে। 

আমিঃ ডাক্তার দেখান, আপনার মনে হয় চুলকানি হয়েছে। 

তন্নিঃ তুই কি ভাবছিস কাল ছেলেটার হাত থেকে বেঁচে গেছিস বলে আমিও তোকে ভয় পেয়ে যাবো? নো নেভার,,, তুই শুধু দেখ আমি তোর কি হাল করি। 

আমিঃ যা পারেন করেন, এখন সরেন সামনে থেকে। 

তারপর সোজা ক্যান্টিনে চলে গেলাম, সানিদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসার দিকে হাটা দিলাম। 

কিছুদূর যাওয়ার পর একটা ছেলে আমার পিছু নিলো। খেয়াল করলাম ছেলেটা আমাকে ফলো করছে, আরেকটু সামনে যাওয়ার পর আরো একটা ছেলে গলির ভিতর থেকে বের হয়ে ওই ছেলেটার সাথে হাটতে লাগলো। 

এভাবে মোট ৫ জন ছেলে আমার পিছু নিলো, আমি তাড়াতাড়ি হাটা শুরু করলাম, ওরাও তাড়াতাড়ি হাটা শুরু করলো। একটু পর একটা ছেলে আমাকে পিছন থেকে ডাক দেয়,,,, 

ছেলেঃ ওই সাদা শার্ট দাঁড়া! 
আমি পিছনে তাকাতেই.......

চলবে......
To Be Continue.......

লেখা ও সম্পাদনাঃ শরিফুল ইসলাম জুনিয়র

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

You can read more

কোরআন ও হাদিস স্বীকৃত আয়াতে শেফা বা সুস্থ হবার তদবির

সুস্থতা-অসুস্থতা উভয়টিই আল্লাহর নেয়ামত। সুস্থ হলে মানুষ বেশি করে আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। শোকর আদায় করে কৃতজ্ঞ হতে পারে। আর অসুস্থ হলে আল্লা...