অনেক সময় দেখা যায় হিজড়া সন্তানের জন্ম হয়েছে।
এর কি কোনো বিশেষ কারণ রয়েছে? অর্থাৎ কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা? চলুন জেনে নিই,
হিজড়া জন্ম হওয়ার
কারণ :
হযরত ইবনে আব্বাস
(রাঃ) বলেছেনঃ হিজড়ারা জীনদের সন্তান। কোন এক বাক্তি আব্বাস (রাঃ) কে প্রশ্ন
করেছিলেন এটা কেমন করে হতে পারে।
জবাবে তিনি
বলেছিলেন “আল্লাহ্ ও রাসুল (সাঃ) নিষেধ করেছেন যে মানুষ যেন
তার স্ত্রীর মাসিক স্রাব চলাকালে যৌন সংগম না করে”, সুতরাং কোন মহিলার
সঙ্গে তার ঋতুস্রাব হলে শয়তান তার আগে থাকে এবং সেই শয়তান দারা ঐ মহিলা গর্ববতী
হয় ও হিজড়া সন্তান প্রসব করে।
(মানুষ ও জীন এর যৌথ মিলনজাত সন্তানকে ইসলাম এ বলা
হয় “খুন্নাস”)।
প্রমানসুত্রঃ সূরা
বানী ইস্রাইল- আর রাহমান -৫৪,
ইবনে আবি হাতিম, হাকিম তিরমিজি।
বৈজ্ঞানিক
ব্যাখ্যায়ঃ দেখা যায় XX প্যাটার্ন ডিম্বানুর সমন্বয়ে কন্যা শিশু আর XY প্যাটার্ন থেকে সৃষ্ট হয় ছেলে শিশু। ভ্রুনের
পূর্ণতার স্তরগুলোতে ক্রোমোজোম প্যাটার্নের প্রভাবে ছেলে শিশুর মধ্যে অন্ডকোষ আর
কন্যা শিশুর মধ্য ডিম্ব কোষ জন্ম নেয়। অন্ডকোষ থেকে নিসৃত হয় পুরুষ হরমোন
এন্ড্রোজেন এবং ডিম্ব কোষ থেকে নিসৃত হয় এস্ট্রোজেন।
এক্ষেত্রে ভ্রুনের
বিকাশকালে নিষিক্তকরণ ও বিভাজনের ফলে বেশকিছু অস্বাভাবিক প্যাটার্নের সৃষ্টি হয়
যেমন XXY অথবা XYY। এর ফলে বিভিন্ন গঠনের হিজড়া শিশুর জন্ম হয়।
একটা ব্যাপার হল, একটি হিজড়া শিশুকে পরিণত বয়সে যাওয়ার আগে যদি যথযথ
মেডিকেল ট্রিটমেন্ট করা হয় তাহলে বেশীভাগ ক্ষেত্রেই তাকে সুস্থ করা সম্ভব।
কিন্তু যখন বোঝা
যায় সে সাধারণ আর দশজনের থেকে আলাদা তখন আসলে অনেক দেরী হয়ে যায়। একইভাবে কোন
পুরুষ বা নারীও হিজড়া হতে পারেন।
কেন সন্তান হিজড়া
হয়?
হিজড়াদের সাথে আমরা
কম বেশী সবাই পরিচিত। কিছু মানুষ হিজড়াদের সাথে মজা করতে পছন্দ করে, কেউ আবার এড়িয়ে চলে। নারীদের ক্ষেত্রে তারা
হিজড়াদের রীতিমত ভয় পায় বিশেষ করে তাদের অশোভন আচরণ এর কারণে। হিজড়ারা মূলত সমাজে
স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে না পেরে নিজেরা আলাদা সমাজ গড়ে তোলে।
পরে সমাজ তাদেরকে
বঞ্ছিত করেছে স্বাভাবিক জীবন থেকে এই ধারণা থেকে এসব অশোভন আচরণ করে থাকে।
হিজড়াদের সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। অনেকে আবার ভুল ধারণা পোষন করি। আসুন আজ
জেনে নেব হিজরা হওয়ার কারণ সম্পর্কে। হিজড়া কি? কেন হিজড়া হয়? হিজড়া কত প্রকার? হিজড়ার কি চিকিৎসা
সম্ভব? ইত্যকার নানা বিষয়।
হিজড়া শব্দটি এসেছে
আরবী হিজরত বা হিজরী শব্দ থেকে যার আভিধানিক অর্থ পরিবর্তন বা Migrate বা Transfer। হিজড়া’
শব্দটির আভিধানিক অর্থ উভয় লিঙ্গ (Common Gender), ইংরেজীতে একে ট্রান্সজেন্ডার (Transgender) বলা হয়।
যদি সহজে বুঝতে চান
হিজড়া কি তাহলে এতটুকু বুঝুন যে,
একজন মানুষ যার শরীরটা পুরষের আর মনটা
নারীর অথবা মনটা পুরুষের আর শরীরটা নারীর। অবশ্য এই ২ প্রকার হিজরা ছাড়াও আরো ৪
রকমের হিজড়া রয়েছে।
হিজড়া কেন হয়?
মানুষ যেমন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়, শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয় তেমনি যৌন প্রতিবন্ধিও হতে পারে। হিজড়া’রা হচ্ছে যৌন প্রতিবন্ধী। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলা হয়। মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম তার আকৃতি প্রকৃতি ঠিক করে। এর মধ্যে ২২ জোড়া ঠিক করে একটি শিশুর তাবৎ বৈশিস্ঠ্য আর একজোড়া বা ২টি ক্রোমোজোম ঠিক করে শিশু ছেলে না মেয়ে হবে।
সে একজোড়া
ক্রোমোজোম বাবার কাছ থেকে
আসে XY আর মায়ের কাছ থেকে
আসে XX। এই এক্স ও ওয়াই এর কম্বিনেশান জটিলতার কারণে শিশু
হিজড়া হয়।
XX প্যাটার্ন ক্রোমোজমে কন্যা শিশু আর XY প্যাটার্ন ক্রোমোজমে সৃষ্ট হয় ছেলে শিশু। অর্থাৎ, X এর সঙ্গে X
এর মিলনে মেয়ে বা xx এবং X
এর সঙ্গে Y এর মিলনে ছেলে
সন্তান বা XY জন্ম নেয়। এবং ভ্রুনের পূর্ণতার স্তরগুলোতে ক্রোমোজোম
প্যাটার্নের প্রভাবে ছেলে শিশুর মধ্যে অন্ডকোষ আর কন্যা শিশুর মধ্য ডিম্ব কোষ জন্ম
।
এক্ষেত্রে ভ্রুনের
বিকাশকালে নিষিক্তকরণ ও বিভাজনের ফলে বেশকিছু অস্বাভাবিক প্যাটার্নের সৃষ্টি হতে
পারে যখনি এমনটা হয় তখনি শিশুর লিঙ্গ জনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। সে হয়তো সঠিক লিঙ্গ
পায়না, অথবা পুরুষ লিঙ্গ পেয়েও পুরুষত্ব পায়না আবার নারী
লিঙ্গ পেয়েও নারীত্ব পায়না।
তখন এক্স ও ওয়াই এর
কম্বিনেশান স্বাভাবিক হয়না, যেমন XXY
অথবা XYY। বা XYX বা YXY
এর ফলে বিভিন্ন গঠনের হিজড়া শিশুর জন্ম
হয়। ভ্রুনের পূর্ণতার স্তরগুলোতে ক্রোমোজম গঠনের প্রভাবে ছেলে শিশুর মধ্যে ‘অন্ডকোষ’
আর কন্যা শিশুর মধ্য ‘ডিম্বকোষ’
জন্ম নেয়। অন্ডকোষ থেকে নিসৃত হয় পুরুষ
হরমোন এন্ড্রোজেন এবং ডিম্বকোষ থেকে নিসৃত হয় এস্ট্রোজেন। এক্ষেত্রে ভ্রুনের
বিকাশকালে নিষিক্তকরণ ও বিভাজনের ফলে বেশকিছু অস্বাভাবিক গঠনের সৃষ্টি হয়। যেমন, XXY অথবা XYY। এর ফলে বিভিন্ন গঠনের হিজড়া শিশুর জন্ম হয়।
হিজড়া এর প্রকারভেদ
আধুনিক জেনেটিক্স
বা চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে হিজড়া হলো সেক্র ক্রোমোজমের ত্রুটিপূর্ণ বিন্যাস (Chromosomal Aberration) বা জিন জনিত জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধি ব্যাক্তি যাদের
জন্ম পরবর্তী সঠিক লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়।
প্রাকৃতিক ভাবে চার
ধরনের হিজড়া হলেও আজকাল অসৎ উদ্দেশ্যে নারী পুরুষদের অপারেশন ও হরমোণ পরিবর্তণ করে
হিজড়া বানানো হয়।
এদের প্রধান সমস্যা
গুলো হল এদের লিঙ্গে নারী বা পুরূষের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে না। কারো কারো
ক্ষেত্রে দেখা যায় লিঙ্গ নির্ধারক অঙ্গ থাকে না। এসবের উপর নির্ভর করে তাদেরকে
কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায।মূলত এটি একটি শারীরিক গঠনজনিত সমস্যা যা অন্যান্য
প্রতিবন্ধীদের মতই কিন্তু প্রতিবন্ধকতার স্থানটি ভিন্ন হওয়াতেই তারা হিজড়া।
হিজড়াদের শারীরিক
গঠন মূলত ৪ প্রকার। কিছু হিজড়া হলো যাদের মধ্যে নারী নারী জননাঙ্গ থাকে না। আবার
কিছু হিজড়া হলো যাদের পুরুষের সকল বৈশিষ্ট্য থাকা সত্বেও পুরুষ জননাঙ্গ থাকে না।
এছাড়া কিছু হিজড়ার উভয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। কারো কোনোটাই থাকেনা। আর শারীরিক ও
মানসিক গঠনের উপর নির্ভর করে এদেরকে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়।
শারীরিক ভাবে পুরুষ
কিন্তু মানষিক ভাবে নারী বৈশীষ্ট্য এর অধীকারী হিজড়াদের বলা হয় অকুয়া, ঠিক বিপরীত হিজড়াদের বলা হয় জেনানা, আর মানুষের হাতে সৃষ্ট বা ক্যাসট্রেড পুরুষদের বলা
হয় চিন্নি।
যদি কোন হিজরা নারী
পুরুষাঙ্গের অধিকারী হয় আর সন্তান উৎপাদনে সক্ষম হয় তবে এদের নারী ধরা হয়। ইসলামে
হিজড়াদের অস্তিত্ব স্বীকার করা হলেও গোপনাঙ্গের ধরণের ভিত্তিতে হিজড়াদের নারী
অথবা পুরুষের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
সেই অনুযায়ীই তাকে
পর্দা, নামায,
রোযা পালন করতে হবে, এমনকি সে মোতাবেক সম্পদের ভাগ ভাটোয়ারা করে দেয়া
হয়েছে। যদিও আমাদের সমাজে হিজড়াদের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়।
আশার কথা
হিজড়া বৈশিষ্ট্য
নিয়ে জন্মানো কোন শিশুর যদি পরিনত বয়সে যাওয়ার আগে চিকিৎসা করা হয় তাহলে বেশীভাগ
ক্ষেত্রেই তাকে সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু যখন আসলে বোঝা যায় সে সাধারন আর দশজনের
থেকে আলাদা তখন আসলে অনেক দেরী হয়ে যায়। এছাড়াও জন্মের পর বাড়ন্ত সময়ে শিশুর যখন
অস্বাভাবিকতা বা হিজড়ার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়; তাহলে তৎক্ষণাৎ
পরিণত বয়সে যাওয়ার আগে যদি সঠিক মেডিকেল ট্রিটমেন্ট করা হয় তাহলে বেশীভাগ
ক্ষেত্রেই তাকে সুস্থ করা সম্ভব।
সঠিক অপারেশনের
মাধ্যমে হিজড়াদের লিঙ্গ সমস্যার সমাধান সম্ভব। মুসলিম রাষ্ট্র ইরানে সরকারি উদ্যোগে, অপারেশনের মাধ্যমে হিজড়াদের পূনর্বাসনের
ব্যবস্থা করা হয়। হিজড়া সম্প্রদায় সৃষ্টির সেরা জীব বা আশরাফুল মাখলুকাতের
অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ মানুষের পর্যায়ভুক্ত,
তারাও সৃষ্টির সেরা। তাদের অবজ্ঞা করা
মানে আল্লাহর সৃষ্টিকেই অবজ্ঞা করা।
হিজড়াদের নিয়ে
রাসুল (স) এর হাদীস রয়েছে। একজন হিজড়া পবিত্র ক্বাবাঘরের খাদেম এর দায়িত্ব পালন
করেছেন বলে শোনা যায়। ভারতে হিজড়ারা ভাতাসহ নানা সুবিধা পায়। পায় একটি সংসদ
সদস্যপদ। বাংলাদেশে হিজড়ারা দীর্ঘদিনে আন্দোলন করে ভোটাধিকার এবং তৃতীয় লিঙ্গের
নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
সরকার তাদেরকে
চাকরী বাকরী দেয়ার কথা ভাবছে। তবে তাদের জন্য সবচেয়ে বেশী যেটা প্রয়োজন সেটা হলো
শিক্ষা। সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে তারা নিজেরাই তাদের অধিকার এবং কাজ খুঁজে
নেবে।
কিন্তু দু:খের বিষয়
হলেও সত্য যে, এদের মধ্যে কিছু লোক হিজড়াদের দিয়ে চাঁদাবাজী
করানোর জন্য তাদেরকে বাইরের লোকদের সাথে মিশতে এবং শিক্ষা গ্রহণ করতে দিতে চায়না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন